জাতীয় পশু বাঘ সম্পর্কে জানুন

 

বাঘের সাধারণ পরিচিতিঃ

বাঘ (Bengal Tiger)  Carnivora বর্গের Felidae গোত্রের বৃহত্তম বনবিড়াল। রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা বাংলার বাঘ (Panthera tigris tigris) বাংলাদেশের জাতীয় পশু। দেহবর্ণ গাঢ়-হলুদ থেকে লালচে হলুদ, তাতে লম্বা কালো ডোরা, পেছন ও উরুতেই বেশি। পেটের দিক সাদাটে। বাচ্চারাও ডোরাসহ জন্মে। হলুদ রঙের লেজে অনেকগুলি কালো বেড়, আগা কালো। কানের পেছন কালো রঙের, তাতে একটি স্পষ্ট সাদা দাগ। চোখের মণি গোল। নখর থাবার ভিতরে ঢোকে। মাথাসহ দৈর্ঘ্য ১৪০-২৮০ সেমি, লেজ ৬০-১১০ সেমি, কাঁধ পর্যায়ে  উচ্চতা ৯৫-১১০ সেমি। বাঘ ও বাঘিনীর ওজন যথাক্রমে ১৮০-২৮০ এবং ১১৫-১৮৫ কেজি, বাঘিনী আকারেও ছোট। Guinness Book of World Records অনুসারে সবচেয়ে ভারি ওজনের বাঘ হলো ১,০২৫ পাউন্ড ওজনের আমুর বা সাইবেরীয় পুরুষ বাঘ Panthera tigris attaica। সাধারণত সাইবেরীয় বাঘেরাই বেশি ভারি, পুরুষ প্রায়শ ৩ শতাধিক কেজি, আর সুমাত্রার বাঘের (Panthera tigris sumatrae) ওজন মাত্র ১৩০ কেজি।গড় উচ্চতা ১১ ফুট, পুরুষ বাঘ গড়ে ২২১ কেজি ওজনের হয়, আর বাঘিনী গড়ে ১৩৭ কেজি ওজনের হয়।

বাঘ কত প্রকার বা বাঘের প্রকারভেদঃ

বাঘের ৮টি উপপ্রজাতির মধ্যে ৫টি এখনও জীবিত। বেঙ্গল টাইগার (Panthera tigris tigris) আছে বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, নেপাল, চীন ও পশ্চিম মায়ানমারে; আমুর (সাইবেরীয়) বাঘ (P. tigris attica) সাইবেরিয়া, মাঞ্চুরিয়া ও উত্তর-চীনে; দক্ষিণ-চীনের (আময়) বাঘ (P. tigris ameyensis) কেবল চীনদেশে; সুমাত্রার বাঘ (P. tigris sumatrae) সুমাত্রায়; ইন্দোচীন বাঘ (P. tigris corbetti) কাম্পুচিয়া, চীন, লাওস, মালয়, পূর্ব-মায়ানমার, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে।

গত পঞ্চাশ বছরে বাঘের যে ৩টি প্রজাতি লোপ পেয়েছে তা হলো জাভার বাঘ (P. tigris sondaica), বালির বাঘ (P. tigris balica) ও কাস্পিয়ান (তুরান/হিরকানীয়) বাঘ (P. tigris virgata)। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বনেজঙ্গলে এখন বাঘের সংখ্যা ৭ হাজারেরও কম বাংলাদেশ (৩৬২), ভুটান (৬৭-৮১), চীন (১১০-১৪০), ভারত (২৫০০-৩৭৫০), মায়ানমার (২৩০-৪৬৫), নেপাল (৯৩-৯৭), রাশিয়া (৩৩০-৩৩৭), ভিয়েতনাম (২০০), কাম্পুচিয়া (১৫০-৩০০), লাওস (অজানা) ও উত্তর কোরিয়া (আনুমানিক ১০), থাইল্যান্ড (২৫০-৫০১), মালয়েশিয়া (৪৯১-৫১০), ইন্দোনেশিয়া (সুমাত্রা,  ৪০০-৫০০)।

রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার: বাঘদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। বিখ্যাত এই বাঘের আবাসস্থল সুন্দরবনে। গায়ে ডোরাকাটা এই বাঘ দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি ভয়ঙ্কর।
চিতাবাঘ: সবচেয়ে দ্রুত গতির বাঘ হলো চিতাবাঘ। এছাড়া এই বাঘের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এরা গাছে উঠতে পারে, যা অন্যান্য বাঘ পারে না।
ওলবাঘ: একসময় অন্যান্য বাঘের পাশাপাশি সুন্দরবনে ওলবাঘ নামে এক জাতীয় বাঘ ছিল। কিন্তু বর্তমানে এ ধরনের বাঘ আর দেখা যায় না।

বাঘ কেন  জাতীয় পশু!

রয়েল বেঙ্গল টাইগার তথা বাঘ আমাদের জাতীয় পশু। কিছু প্রাণীকে আমরা বিশেষ মর্যাদা দিয়ে থাকি। জাতীয় প্রাণী মানে আমাদের জাতির পরিচায়ক বা আইকন। বিশ্বের দরবারে আমাদের সম্মানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার মতো যে উপকরণগুলো আছে তার মধ্যে বাঘ অন্যতম। এর বাইরেও পরিবেশ ও প্রকৃতির দৃষ্টিকোণ থেকে বাঘের একটি বড় ভূমিকা আছে।

বাঘের খাবারঃ 

প্রধানত নিশাচর, মাঝারি ও বড় আকারের স্তন্যপায়ী মহিষ, হরিণ, বুনো শূকর ও সজারু ইত্যাদি শিকার করে খায়।
যায়। দৈনিক ৫-১৫ কেজি মাংস খায়। পুরুষ বাঘ ৩০ কেজি পর্যন্ত মাংস খেয়ে নিতে পারে।

বাঘের বৈশিষ্ট্য, জীবন প্রনালী  ও  বাঘ সম্পর্কে অজানা তথ্যঃ  

নিজের চেয়ে দ্বিগুণ বড় জন্তু শিকার করতে পারে। বাঘ অন্ধ হয়ে জন্মগ্রহণ করে। জন্মের প্রথম এক সপ্তাহ পর্যন্ত বাঘের বাচ্চা পুরোপুরি অন্ধ থাকে।
বাঘ অত্যন্ত অভিযোজন দক্ষ জন্তু; উষ্ণমন্ডলীয় অরণ্য, ম্যানগ্রোভ জলাভূমি, পত্রমোচী বন সর্বত্রই বসবাস করতে পারে। নানা জলবায়ুতে উপমহাদেশের অত্যুষ্ণ বনাঞ্চল থেকে রাশিয়ায় তুষারঢাকা হিমশীতল দূরপ্রাচ্যেও বাঘেরা বসবাস করে। এক সময়ে বাংলাদেশের সবগুলি বনেই বাঘ ছিল, এখন আছে শুধুই সুন্দরবনে এবং অত্যন্ত বিপন্ন একটি প্রাণী হিসেবে।
বাঘ তাদের এলাকা চিহ্নিত করে ইউরিনের মাধ্যমে যা অন্য বাঘদের সতর্ক করে। বাঘের প্রস্রাবের গন্ধ অনেকটা বাটার মাখানো পপকর্ণের মত।
বাঘেরা শুধুমাত্র দূরবর্তী বাঘদের সাথে যোগাযোগের জন্যই গর্জন করে থাকে। রাতের নির্জনতায় বাঘের গর্জন ৩ কিলোমিটার দূর থেকেও শোনা যায়। যখন তারা ভয় পায় বিড়ালের মতোই শিস দেয়।
পুরুষ বাঘ উদার হয়, তারা স্ত্রী বাঘকে এবং শাবকদের আগে খেতে দেয়।
গল্পে বাঘকে যেভাবে নিরীহ বোকা প্রাণী হিসেবে দেখানো হয় সুন্দরবনের বাঘ মোটেও তা নয়। প্রতিকূল পরিবেশে বেড়ে ওঠা সুন্দরবনের বাঘ শুধু হিংস্রই নয়, তারা যথেষ্ট বুদ্ধিমান। সুন্দরবনের যে অংশে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের বাসভূমি তার বেশিরভাগটাই জলবেষ্টিত। চারিদিকে সমুদ্রের নোনা জল। জোয়ারে বিস্তীর্ণ এলাকা জলের তলায় চলে যায়। জোয়ার-ভাটার খেলায় অনবরত পাড় ভাঙছে। সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে স্থলভাগ। তার সঙ্গে রয়েছে সমুদ্রের জলচ্ছ্বাস এবং ঘূর্ণিঝড়। এরকম সঙ্কটময় পরিবেশে বেঁচে থাকতে প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয় বাঘকে। বুদ্ধিও খাটাতে হয়।
বাঘ শুধু নিজেকে বাঁচাতেই ব্যস্ত থাকে। কিন্তু বাঘিনীকে তার শাবকদের কথা মাথায় রাখতে হয়। একটি বাঘিনী চারটি পর্যন্ত বাচ্চার জন্ম দিয়ে থাকে। জোয়ারে স্থলভাগে জল উঠে গেলে বাঘিনীরা বড়জোর তার একটি বাচ্চাকে বাঁচাতে সক্ষম হয়। বাকিরা জলের তোড়ে ভেসে যায়। এভাবে অনেক ব্যাঘ্র শাবকের মৃত্যু হয়।জৈষ্ঠ মাসে জোয়ারের জল বছরের অন্য সময়ের তুলনায় বেশি বাড়ে। আশ্বিন পর্যন্ত এর রেশ থাকে। জলোচ্ছ্বাসের সময় দু'-তিন দিন পর্যন্ত জলে ডুবে থাকে সুন্দরবন।
 জোয়ার শেষে ছয় ঘণ্টা পর আসে ভাটা। তখন শুরু হয় বাঘগুলোর খাবার খোঁজার পালা। তাই শিকার বা খাবারের সন্ধান করতে একটি বাঘের প্রতিদিন ছয় ঘণ্টার বেশি সময় মেলে না। এ সময়ের মধ্যে শিকার, আহার ছাড়াও বাসস্থানের সন্ধান করতে হয় বাঘকে। চলে চোরা শিকারিদের সঙ্গে বাঘের লড়াই। ট্রাঙ্কুলাইজারগানে চেতনানাশক ওষুধ দিয়ে বাঘিনীকে অচেতন করা হয়। পরে পাচারকারীরা বাঘের দাঁতও অন্য অঙ্গ তুলে নিয়ে যায়। এত প্রতিকূলতার মধ্যে সুন্দরবনের বাঘ নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পেরেছে স্রেফ উপস্থিত বুদ্ধির জেরে।

সুন্দরবনের বাঘেদের চরিত্র যে ক্রমশ বদলাচ্ছে সেটা নিজেদের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝতে পারছেন আশপাশের গ্রামবাসীরা। ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকার আশপাশে যারা থাকেন তারা নিয়মিত বাঘেদের গতিবিধির খবর রাখেন। সুন্দরবনের বহু মানুষ জঙ্গলের উপর নির্ভরশীল। মধু সংগ্রহ কিংবা কাঁকড়া ধরতে তাদেরকে বাঘের ডেরায় ঢুকতেই হয়। বাঘের মনের খবর তাদের কাছ থেকেই সবথেকে ভাল জানা যায়। 
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা গেছে, সুন্দরবনের বাঘ আর আগের মতো নেই। তারা এখন খুব চালাক হয়ে গিয়েছে। আগে বাঘ যেখানে কাউকে আক্রমণ করতো সেখানে আবার শিকার পাওয়া যাবে, এই আশায় বেশ কিছুদিন ঘাপটি মেরে থাকতো। ফলে মৌলিরা সাবধান হয়ে যেতো। সেদিকে কেউ ভিড়তো না। কিন্তু এখন বাঘেরা এক জায়গায় মানুষকে আক্রমণ করার পর পরের দিন আবার অন্য জায়গায় হানা দিচ্ছে। ফলে জঙ্গলে যারা যায় তারাও বাঘেদের গতিবিধি বুঝতে পারছে না।
 
 
সুন্দরবনের বাঘেদের সঙ্গে মানুষের সংঘাত নিয়ে গবেষণা করছেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সোমা সরখেল। তার জন্য সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের আশপাশের গ্রামে যারা বাঘের হাত থেকে বেঁচে ফিরেছেন তাদের থেকে তথ্য জোগাড় করেছেন। বাঘ বিধবা এবং আশপাশের গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি জানাচ্ছেন, মানুষ বাঘেদের খাদ্য তালিকার মধ্যে নেই। বরং মানুষই তাদের ডেরায় ঢুকে সুন্দরবনের বাঘকে নরখাদক করে তুলছে।
 তাঁর ব্যাখ্যা, সুন্দরবনের সব বাঘ কিন্তু মানুষ খেকো নয়। এখানে দু'ধরণের বাঘ রয়েছে। কিছু বাঘ 'ডেজিগনেটেড ম্যান ইটার'। কেউ 'অ্যাগ্রেসিভ ম্যান ইটার'। তবে বারবার মানুষ যদি তাদের সংস্পর্শে আসে তাহলে বাঘ একদিন মানুষ খেকো হয়ে উঠতে পারে। সোমার কথায়, 'ব্যক্তিগত জগৎ আর নিজের উঠোন সকলেরই ব্যক্তিগত। বাঘের ব্যক্তিগত পরিসরকে গুরুত্ব দিতে হবে।' তাঁর সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০০৯ সালের মে মাসে আইলার পর জঙ্গল থেকে বসতিতে বাঘের অনুপ্রবেশ যথেষ্ট বেড়ে যায়। 
নদীতে জোয়ার আসার আগে বাঘ ঠিক টের পেয়ে যায়। নদী-খালের ধারে অথবা বনের ভিতর বাঘের পায়ে জল লাগলেই দ্রুত হাঁটা শুরু করে। বাঘ তখন উঁচু জায়গার সন্ধান করে। অনেক সময় জোয়ারে জল এত দ্রুত বাড়তে থাকে যে বাঘ আর ডাঙায় উঠতে পারে না। তখন সে জলে গা ভাসিয়ে দেয়। বড় কোনো গাছের ডাল পেলে সেটাকে আঁকড়ে ধরে। গলাটা উঁচু করে ঝুলে থাকে।

বাঘের শিকার পদ্ধতিঃ  

বাঘেরা নিঃশব্দে শিকারের পিছু নেয়। অতর্কিত আক্রমণ করে। এ সময় এদের গতিবেগ থাকে ঘণ্টায় ৫০-৬৫ কিলোমিটার। জলেও শিকার ধরতে পারে। ঘণ্টায় ৩২ কিমি বেগে সাঁতার কাটতে পারে। 
বাঘ রাতেই বেশি শিকার করে। শিকারের সময় বাঘ শ্বাসনালী কামড়ে ধরে। শিকার দমবন্ধ হয়ে না মরা পর্যন্ত বাঘ গলাটা আঁকড়ে ধরেই থাকে।
এদের ক্যানাইন দাঁত ৪ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়, ব্লেডের মত ধারালো বাঁকানো নখ। সামনের পায়ের নখ ৩ ইঞ্চি।
বাঘের চোখ পিউপিল গোলাকার। কারণ বাঘ সাধারণত সকালে এবং সন্ধ্যায় শিকার করে।

গল্প গান আর সাহিত্যে আর ইতিহাসে  বাঘ ঃ

ভারতীয় সাহিত্যে বাঘ:

উপেন্দ্রকিশোরের বাঘ মামা আর শিয়াল ভাগ্নের গল্প পড়ে সেই ছোট বেলা থেকেই প্রশ্নটা মনের মধ্যে উঁকি দিত। এক ধূর্ত শিয়াল কুয়োর মধ্যে মাদুর বিছিয়ে তার উপর বাঘ মামাকে বসতে দিয়েছিল। বেচারা বাঘ মাদুরে বসতে গিয়ে কুয়োর মধ্যে পড়ে জলে হাবুডুবু খেয়েছিল। অনেক বাঙালি গল্প লেখক বাঘকে গোবেচারা বানিয়ে দিয়েছেন।
 'পায়ে পড়ি বাঘমামা, করো নাকো রাগ মামা, তুমি যে এ ঘরে কে তা জানত' গান শুনিয়ে বাঘকে বশে আনার কৌশল শিখিয়েছেন বরেণ্য চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়। শিবরাম চক্রবর্তীর ‘আমার বাঘ শিকার’, ত্রৈলোক্যনাথের ডমরুধরের বাঘ শিকার গল্পেও বাঘকে বোকা হিসেবে চিনেছে বাঙালি। হার্পারকলিনস প্রকাশনীর বিখ্যাত শিশুদের গল্পের বই 'দ্য টাইগার হু কেম টু টি'- র লেখক জুডিথ কের এক 'দয়ালু' বাঘকে ঘরে বসিয়ে চা পর্যন্ত খাইয়েছেন। রূপকথার গল্পে শিয়াল পণ্ডিতের কাছে বারবার বোকা বনেছে বনের রাজা।
বাঘ ও কিছু ঐতিহাসিক গল্প:
অনেকের কাছেই বাঘ একটা ভয়ঙ্কর হিংস্র প্রাণী। আবার রাজ রাজাদের কাছে বাঘ ছিল শৌর্যের প্রতীক।
মহীশূরের রাজা টিপু সুলতান ছোটবেলা থেকেই বাঘের গল্প শুনতে ভালোবাসতেন। কিশোর বয়সে তিনি বাঘ পুষতে শুরু করেন। তখনকার শ্রেষ্ঠ কারিগরদের দিয়ে কাঠের ফ্রেমের উপর সোনার পাত বসিয়ে তিনি একটি রত্নখচিত সিংহাসন বানিয়েছিলেন। যার নাম ছিল 'ব্যাঘ্রাসন'। আট কোণা সিংহাসনের মাঝখানে ছিলো একটি বাঘের মূর্তি। আসনটির রেলিংয়ের মাথায় বসানো ছিলো সোনা দিয়ে বানানো দশটি বাঘের মাথা। আসনের উপর ডোরাকাটা দাগ। পোশাকেও বাঘের ছবি আঁকা থাকতো।
কোন এক সময় ইংরেজ সেনাপতি হেক্টর মুনরোর একমাত্র পুত্র সুন্দরবনের বাঘ শিকার করতে এসে বাঘের হাতে নিহত হয়েছিলেন। তার আদলে টিপু একটি খেলনা বানিয়েছিলেন। যেখানে একজন ইংরেজ সেনাকে একটি বাঘ কামড়াচ্ছে। তার জেরে সেই ইংরেজ সাহেবের মুখ থেকে গোঙানির শব্দ শোনা যেত। যা 'টিপু'স টাইগার' নামে পরিচিত।
বাঘ নিয়ে  রুপকথার গল্পোঃ
এক সওদাগরের দুই সুন্দরী স্ত্রী ছিলেন। ছোটো বউয়ের চক্রান্তে সন্তানসম্ভবা বড়ো বউ গুলালবিবি সুন্দরবনে নির্বাসিত হন। কয়েকদিন পর সেখানেই যমজ পুত্র-কন্যার জন্ম দিয়ে তার মৃত্যু হয়। সদ্যোজাত শিশু দু'টির কান্না শুনে বনের বাঘ, কুমির, হরিণ, অজগর, বানর সবাই ছুটে আসে। তারাই দুই ভাইবোনকে লালনপালন করে বড়ো করে তোলে। ছেলেটি বড়ো হয়ে বাঘের রাজা এবং মেয়েটি বনবিবি নামে পরিচিত হয়।
সুন্দরবন এলাকায় বাঘেদের দেবী হিসেবে পূজিত হন বনবিবি। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই বনবিবি হলেন মানুষের রক্ষাকর্ত্রী। বনের বাওয়ালি-মৌলেরা বাঘের মুখে পড়লে বনবিবির নাম স্মরণ করে মন্ত্র পড়লে বাঘ দৌড়ে পালাবে। যারা সুন্দরবনে মধুর চাক ভাঙতে অথবা কাঠ কাটতে যান তাঁরা বনে কাজে যাওয়ার আগে বনবিবির পূজা করেন।

বাঘের প্রজননঃ 

বাঘের মিলন বছরের যে কোনও সময় হতে পারে। নভেম্বর-এপ্রিলের মধ্যেই সর্বাধিক মিলন ঘটে।বাঘিনীদের গর্ভাবস্থা ১০৩-১০৫ দিনের। এক সঙ্গে ২-৪টি বাচ্চা হয়।

বাঘ ও সুন্দরবন একে অপরের প্রয়োজনঃ

বাঘ যেমন সুন্দরবনের জন্য অত্যাবশ্যক, তেমনি সুন্দরবনের ও বাঘের প্রয়োজন। সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল মানুষও বাঘের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তোলে। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বিশ্বখ্যাত ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন বিলুপ্ত হয়ে গেলে গোটা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে। বহুলাংশে বাড়িয়ে দেবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাকের আশংকা। আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে প্রচন্ড তির সম্মুখীন হবে সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের সুন্দরবন বলেও উল্লেখ করেন বিষেশাজ্ঞরা।

তথ্যসুত্রঃ বাংলাপিডিয়া, এইসময়  সময়টিভি
Previous Post Next Post

نموذج الاتصال