নারীপক্ষ



মাহমুদ শফিক

| সূচীপত্র প্রকাশনী

নারীপক্ষ-নারীদের নিয়ে লিখা বই। আরো স্পষ্ট করে লিখতে চাইলে নারীদের কৃষ্ণপক্ষ কে উপজীব্য করে লেখা হয়েছে বইটি। প্রায় পুরো বইটি ইতিহাস নির্ভর। কালে কালে নারী কিভাবে নির্যাতিত, নিপীড়িত, বঞ্চিত, শোষিত হয়েছে। প্রায় প্রত্যেকটা অধ্যায়ে লেখক বারংবার তা তুলে ধরেছেন।

প্রাচীন কাল থেকে আধুনিক যুগে পৌঁছা অব্দি নারী কেমন জীবন যাপন করেছে বইয়ে তা উঠে এসেছে, ইতিহাসের সূত্র ধরে। অতিমাত্রায় প্রাচীন ইতিহাস নির্ভর হওয়ায় বইটির ভাষাও পাঠকের জন্যে সুখকর বলা যায় না। প্রাচীন ভারতবর্ষের ইতিহাস দিয়ে শুরু হয়ে তা মধ্যযুগ অব্দি বিস্তৃত হয়েছে। পাশ্চাত্যে বিভিন্ন বিপ্লব সাধনেও যে নারীর পূর্ণ অধিকার আদায়ের পথ সুগম হয়নি, নারী ‘মানুষ’ হিসেবে বাঁচার অধিকার পায়নি, উঠে এসেছে সেসব।

পুরো বই পড়ে এক আশ্চর্যজনক সাদৃশ্য লক্ষ্য করা গেছে। পুব থেকে পশ্চিম সবখানেই ঘরে স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও পুরুষ রক্ষিতা রেখেছে, পতিতালয়ে গিয়েছে। প্রাচ্যের জমিদার থেকে শুরু করে পশ্চিমের বুর্জোয়া-লাম্পট্যে প্রায় সকল পুরুষই সমান।

বইটিতে ইসলাম কে ‘মধ্যযুগীয়’ ধর্ম বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যে সময়ের অন্যান্য ধর্ম, এবং, সমাজের নারীকূলের ইতিহাস উঠে এসেছে। সে সময়ের মুসলমান সমাজ নারী কে কতটূকু অধিকার দিয়েছে তা বিশেষভাবে আলোচিত হয়নি। শেষ দিকে বাংলাদেশের কয়েকটি ঘটনা বিচ্ছিন্নভাবে উঠে এসেছে। ইসলামে নারীর অধিকার নিয়েও লেখক কোনো কিছুর উল্লেখ করেননি।

আদিকাল থেকে আধুনিক যুগ-অনেক নারী লেখক, সমাজ সংস্কারক, নারী মুক্তির পথিকৃৎ এলেও নারীর প্রকৃত মুক্তিলাভ বা অধিকার আদায়ের ঘটনা ঘটেনি। নারী সেই তিমিরেই রয়ে গেছে।

আমি মূলত আধুনিক কালে নারীবাদে বিশ্বাসি এবং নারী অধিকার নিয়ে সোচ্চার কর্মী সম্প্রদায়ের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া জানার জন্যে বইটি পাঠে বিশেষ আগ্রহি ছিলাম। সে আশায় গুড়েবালি। শেষ অব্দি কিছু চর্বিত চর্বন আর দুয়েকটা বিচ্ছিন্ন কেস স্টাডি দিয়ে বইয়ের ইতি ঘটেছে।

চূড়ান্ত বিবেচনায় বইটি আমাকে হতাশ করেছে। নতুন তথ্য বা তত্ত্ব কিছুই বইয়ে উঠে আসেনি। তথ্য-প্রযুক্তির এই উৎকর্ষের যুগে নারী অধিকার এবং নারী নির্যাতনের বিভিন্ন রূপ রয়েছে। নারী সমাজ অধিকার নিয়েও নানা রকমভাবে সচেতন হয়ে উঠছে। বইয়ে সেসব উঠে আসলে পাঠকের জন্যে তৃপ্তিদায়ক হতে পারতো।


Previous Post Next Post

نموذج الاتصال